image

শহিদ মোঃ এমদাদুল্লাহ

  • ৩১ জানুয়ারি ২০১৫
  • |
  • ২১৭তম

শহিদ মোঃ এমদাদুল্লাহ

শহিদি কাফেলা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২১৭তম শহিদ হলেন মোঃ এমদাদুল্লাহ ওরফে জুনায়েদ২০১৫ সালের আজকের এই দিনে (৩১ জানুয়ারি) মিরপুর মডেল থানা পুলিশ কর্তৃক ক্রসফায়ারে হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেন তিঁনি। তিঁনি ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর পশ্চিম শাখার শাহআলী থানার ৯৩ ওয়ার্ডের সভাপতি (সদস্যপ্রার্থী) ছিলেন।


শাহাদাতের ঘটনা :

২০১৫ সালে ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসের কর্মসূচি পালন করতে না দেয়া ও আওয়ামী সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে ৬ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। ৫ জানুয়ারির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী সরকার একদিন আগে থেকেই সারা দেশে সড়ক ও নৌপথে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। সভা সমাবেশ বন্ধ করে দেয়। দিন যতই যাচ্ছে ততই বাড়ছে গণগ্রেফতার, গুম ও বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার। প্রথম আলোর তথ্যমতে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের টানা অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে র‌্যাব ও পুলিশের ক্রসফায়ারে সারা দেশে ১৫ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৬ দিনের মধ্যে আটজন নিহত হয়। এঁদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের তিনজন, ছাত্রদলের তিনজন ও ছিনতাইকারী দুজন। এই আটজনের মধ্যে পাঁচজন নিহত হন ঢাকায়।

২০ দলীয় জোটের ডাকে টানা অবরোধের ২৬তম দিন ছিল ৩১ জানুয়ারি শনিবার। কোনো অভিযোগ ছাড়াই ৩১ জানুয়ারি শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর মিরপুর ২ নম্বর সেকশনের ২ নম্বর সড়কের ৬ নম্বরের বাসার সামনে থেকে ১৯ বছর বয়সী মোঃ এমদাদুল্লাহকে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ সন্দেহবশত গ্রেফতার করে। রাত নয়টা পর্যন্ত থানায় রাখার পর তাঁকে নিয়ে বের হয় শিবিরের বিভিন্ন ম্যাচে অভিযান করার জন্য। বিভিন্ন ম্যাচে অভিযান করে আরও ১১জন নিরপরাধ ভাইদের গ্রেফতার করে পুলিশ। এঁরা হলেন: ফরিদউদ্দীন, মনিরুজ্জামান সরকার, রাসেল আহমেদ, মাসুদ রানা, একেএম ফয়সাল কবীর, আমিনুল ইসলাম, মনির হোসেন, সালাউদ্দিন রিপন, আবদুল্লাহ আল মামুন, শিপন মাহমুদ ও মোঃ লাবু।

এরপর মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দীন খানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল মোঃ এমদাদুল্লাহকে নিয়ে রূপনগর বেড়িবাঁধ এলাকার এনা প্রোপার্টিজের প্রবেশ গেটে রাত আনুমানিক সোয়া ১১টার দিকে গুলি করে হত্যা করে। শহিদ মোঃ এমদাদুল্লাহর শরীরে গুলির ছয়টি জখমের চিহ্ন রয়েছে বলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেহানুল হকের সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এরমাঝে রাত ১০টার দিকে মিরপুর মডেল থানার কামাল নামে এক এসআই পরিচয়ে শহিদ মোঃ এমদাদুল্লাহর বড় ভাই আনোয়ার উল্লাহকে ফোন দেন। তিনি জানতে চান এমদাদের সাথে তার সম্পর্ক কী। তিনি উত্তরে বলেন, ছোট ভাই। কি করেন জানতে চাইলে বলেন, ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করেন। এরপর ঐ পুলিশ সদস্য লাইন কেটে দেয়। মিরপুর মডেল থানা পুলিশ হত্যার দায় এড়াতে লাশ রূপনগর থানায় রেখে যায়। রূপনগর থানা কর্তৃপক্ষ (এসআই মনিরুল ইসলাম) শহিদ মোঃ এমদাদুল্লাহর মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে রেখে চলে আসে।

 

বন্দুকযুদ্ধের নাটক : 

ইতিপূর্বে রাজধানীতে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটলেও গণমাধ্যমে ডিএমপির মিডিয়া বিভাগ থেকে কোনো প্রকার প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর নজির নেই। শুধুমাত্র এই ঘটনাটিকে সাজাতেই মিডিয়া বিভাগ থেকে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে পুলিশের পক্ষে বন্দুকযুদ্ধের দাবি করা হয়েছে। ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিরপুর থানা পুলিশ তাকে আটক করে। তারপর রাতে অভিযানের সময় কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার জন্ম। মিরপুর থানা পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধ হলেও এমদাদকে আহতাবস্থায় কেন ফেলে আসা হয়েছে, কেনইবা তাকে রুপনগর থানা পুলিশ উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এসেই তারা চলে যায়, তারও কোনো ব্যাখ্যা মিডিয়া বিভাগের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে তাদের দুজন সদস্য আহত হলেও তাদের পরিচয় জানানো হয়নি, বলা হয়নি তাদের বর্তমান অবস্থান, অবস্থার কথাও।

 

পরিচয় :

শহিদ মোঃ এমদাদুল্লাহ ছিলেন জামালপুরের জামালপুর সদর থানার বানিয়ার পাড় গ্রামের মৃত জামাল উদ্দীনের ছেলে। তিঁনি জানুয়ারি, ১৯৯৬ সালে মা আনোয়ারা বেগমের কোলে জন্মগ্রহণ করেন। তিঁনি তাঁর তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে ৬ষ্ঠ। শহিদ মোঃ এমদাদুল্লাহ ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়। সর্বশেষ তিঁনি ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের অনার্স ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন। বাগানের সবচেয়ে প্রিয় ফুটন্ত গোলাপ শহিদ মোঃ এমদাদুল্লাহ ভাইকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা শহিদ হিসাবে কবুল করুন এবং জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন, আমিন।

 

একনজরে শহিদ মোঃ এমদাদুল্লাহ :

নাম : মোঃ এমদাদুল্লাহ

বাবার নাম : মৃত জামাল উদ্দীন

মাতা : আনোয়ারা বেগম

জন্ম তারিখ : ১ জানুয়ারি, ১৯৯৬

স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম - বানিয়ার পাড়, থানা - জামালপুর সদর, জেলা জামালপুর

পরিবারের মোট সদস্য : ১০ জন (বাবা, মা, তিন ভাই ও পাঁচ বোন)
ভাই-বোনদের মাঝে অবস্থান : ৬ষ্ঠ
সর্বশেষ পড়াশোনা : ঢাকা কলেজ (পরিসংখ্যান বিভাগ - অনার্স ১ম বর্ষ)

সাংগঠনিক মান : সদস্যপ্রার্থী (ঢাকা মহানগর পশ্চিম শাখা)
শাহাদাতের তারিখ : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৫

শাহাদাতের স্থান : ঢাকার মিরপুরের বেড়ীবাঁধ এলাকা (পুলিশ কতৃক গুলি)।